করোনা প্রভাবে ১০ হাজারের নিচে নামল নিফটি, গত ৩০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন: ১০ তথ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা খবর ২৪:করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে বৃহস্পতিবার বড়সড় ক্ষতির মুখ দেখল দেশের শেয়ার বাজার (Share Market), গত দু’বছরের মধ্যে এই প্রথমবার নিফটির (Sensex Nifty) ৫০ টি বেঞ্চমার্ক সূচক ১০ হাজারেরও নিচে নেমে গেছে। ওই মারণ ভাইরাসের (Coronavirus) ছড়িয়ে পড়া রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইউরোপ থেকে আগত পর্যটকদের উপর অস্থায়ী ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর এরপরেই বিশ্বের বাণিজ্য বাজারে পড়ল বড়সড় প্রভাব, শেয়ার কেনাবেচা (Stock Market) সাময়িকভাবে প্রায় স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়ল ভারতের শেয়ার বাজারেও। S&P BSE Sensex বৃহস্পতিবার বাজার খোলার প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১,৮২১.২৭ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ৩৩,৮৭৬.১৩ তে পৌঁছে যায়। ওদিকে NSE Nifty-এর বেঞ্চমার্ক বুধবার বাজার বন্ধের সময়কার তুলনায় ৫৪১.৮৫ পয়েন্ট কমে ৯,৯১৬.৫৫ পয়েন্টে চলে গেছে।
শেয়ার বাজার সংক্রান্ত ১০ তথ্য দেখুন এখানে:
সকাল ৯টা বেজে ৪৭ মিনিটে সেনসেক্স ১,৬৮৬.২২ পয়েন্ট বা ৪.৭২ শতাংশ নেমে গিয়ে ৩৪,০১১.১৮ এ দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি নিফটি ৫০৪.০৫ পয়েন্ট বা ৪.৮২ শতাংশ নেমে ৯,৯৫৪.৩৫ এ এসে দাঁড়িয়েছে। ১১টি সেক্টরাল সূচকের সবকটিতেই বড়সড় লোকসান হয়েছে, নিফটি ব্যাংকে দেশের ১২ জন প্রধান ঋণদাতাদের ঋণ দানের পরিমাপ ৫.৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
নিফটি বাস্কেটের ৫০ টি শেয়ারের প্রায় সবকটিই নিম্নমুখী ছিল। ইয়েস ব্যাংক, টাটা মোটরস, আদানি পোর্টস, টাটা স্টিল, বেদান্ত, ওএনজিসি, জেএসডব্লিউ স্টিল এবং এসবিআই-র শেয়ার শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলির লোকসান হয়েছে প্রায় ৭.৬৩ শতাংশ থেকে ১১.৯৮ শতাংশ।
এইচডিএফসি ব্যাংক, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসিআইসিআই ব্যাংক এবং ইনফোসিসের সূচক সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখ দেখেছে, সূচক একসঙ্গে ৬৫০ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইউরোপ থেকে আগত পর্যটকদের উপর শুক্রবার থেকে আগামী ৩০ দিনের জন্যে অস্থায়ী ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এরপরেই বিশ্বের বাণিজ্য বাজারে পড়ে বড়সড় প্রভাব, শেয়ার কেনাবেচা সাময়িকভাবে প্রায় স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়ল ভারতের শেয়ার বাজারেও।মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য বলেছিলেন যে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাণিজ্য প্রভাবিত হবে না।
বিশ্লেষকরা বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপের উপর ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণেই বিশ্ব বাণিজ্য উদ্বেগের সঞ্চার হয়। বিশ্ব জুড়ে এই অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন তাঁরা।
এশীয় বাজারে ইক্যুইটিগুলি হ্রাস পেয়েছে, এমএসসিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক শেয়ারের ব্রডকাস্ট ইন্ডেক্স অনুযায়ী জাপানের বাইরের দেশগুলিতে ২০১৯ সালের প্রথম দিকের থেকে খারাপ অবস্থায় চলে গেছে শেয়ার সূচক, সর্বনিম্ন পর্যায় ৪.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বাজার এবং জাপানের নিকিকের শেয়ার ৫.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বেঞ্চমার্ক ৭.৪ শতাংশ নেমে গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পিআই ৪.৬ শতাংশ কমে গিয়ে সাড়ে চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শেয়ার বাজারেও ধাক্কা লেগেছে। S&P 500 শেয়ার ৪.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, S&P 500-র বেঞ্চমার্ক সূচকটি ৪.৮৯ শতাংশ হ্রাসের পরে, স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। এদিকে Euro Stoxx 50 ফিউচার ২০১৬ সালের পর এই প্রথম ৫.৮ শতাংশ কমে তাদের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে গেছে।
করোনা ভাইরাসের কারণেই বিশ্ব বাজারে কেনাবেচা প্রায় বন্ধ। আতঙ্কে ভুগছেন বিনিয়োগকারী। যখন এমনিতেই গোটা বিশ্বে আর্থিক মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তখন এই করোনা-ধাক্কা সংকট আরও তীব্র করে তুলতে পারে বলেই আশঙ্কা।
মার্কিন ঘোষণার আগে অপরিশোধিত তেলের দামও প্রায় ৪ শতাংশ কমে যায়। সোমবার, উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে অপরিশোধিত তেলের দামে একদিনের নিরিখে সবচেয়ে বেশি পতন ঘটে। এর ফলে বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কায় ভুগছেন, যার ফলে গত ১০ বছরের মধ্যে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম সবচেয়ে কমে গেছে।
দেশের শেয়ার বাজারে সেনসেক্স ৬২.৫ পয়েন্ট বা ০.১৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫,৬৯৭.৪০ পয়েন্টে, যদিও নিফটি আগের অবস্থা থেকে ৬.৯৫ পয়েন্ট (০.০৭ শতাংশ) বেড়ে ১০,৪৫৮.৪০ তে এসে দাঁড়িয়েছে।

