‘হার্ড ইমিউনিটির উপরে ভরসা করে চোখ বন্ধ করে থাকা অনৈতিক’, কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে খোলা চিঠি আন্তর্জাতিক গবেষকদলের!

নিজস্ব সংবাদদাতা খবর ২৪: কোভিড মোকাবিলায় সারা বিশ্ব জুড়ে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও করোনা সংক্রমণ যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে এমনটা বলা যায় না। বরং সেকেন্ড ওয়েভ সংক্রমণ শুরু হয়েছে সারা দুনিয়ায়। এই অবস্থায় হার্ড ইমিউনিটি আসার অপেক্ষায় হাত গুটিয়ে বসে থাকা কোনও সমাধান আনবে না, মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। সারা পৃথিবীর ৮০ জন গবেষকের এক দল তেমনটাই মনে করছেন। নিজেদের কথা এক খোলা চিঠিতে তুলে ধরেছেন ওই চিকিৎসকেরা। চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেট জার্নালে।গত মাস ছয়েক ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে কোভিড ১৯ সংক্রমণ নিয়ে অসংখ্য গবেষণা চলছে। অনেকেই আস্থা রাখছেন হার্ড ইমিউনিটিতে। তাঁদের মত, ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি কার্যকর হার্ড ইমিউনিটি। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দেবী শ্রীধর যেমন মনে করেন সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সবাই কম-বেশি সংক্রমিত হয়ে গেলে হার্ড ইমিউনিটি চলে আসতে বাধ্য। তবে অন্য একাংশের মত, জনসংখ্যার যে অংশ বেশি সংক্রমণপ্রবণ, সেখানে হার্ড ইমিউনিটি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার অর্থ অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে ফেলা।ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা অনৈতিক। সংক্রমণের হার কমাতে পারে এমন পদক্ষেপ নেওয়াই দায়িত্ববান সরকারের একমাত্র কর্তব্য, খোলা চিঠিতে এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসক-গবেষকের দল। আপাতত বেশ কিছু দিন নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হতে পারে। প্রাক-কোভিড সময়ের মতো ফের জনজীবন স্বাভাবিক করে তুললে অদূর ভবিষ্যতেই ফের সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়া রাস্তা থাকবে না আর। সংক্রমিত রোগীকে আইসোলেট করে রাখাই একমাত্র রাস্তা, চিঠিতে এও বলা হয়েছে।একবার করোনা সংক্রমণ হলে রোগীর শরীরে ফের করোনাভাইরাস আক্রমণ করতে পারে কী না, সেই নিয়ে বিগত বেশ কিছু মাস ধরে গবেষণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এমন একটি কেস ধরা পড়ে। ২৫ বছরের যুবকের পর পর দু’বার সংক্রমণ হয়। এর পর সারা পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকটি একই রকম কেস পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এত অল্প কেস থেকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে কোভিড ১৯-এর পুনর্সংক্রমণের সম্ভাবনা মাথায় রেখেই সরকারের উচিত করোনাবিধি নির্ধারণ করা, এও তাঁরা বলছেন সাফ!কেন না প্রথমত এটা স্পষ্ট যে, পুনর্সংক্রমণের সম্ভাবনা বলেই দেয় হার্ড ইমিউনিটি বলে কিছু হয় না। একাধিক বার কোভিড ১৯ সংক্রমণের অর্থ প্রথম বার ভাইরাস আক্রমণের পর সুস্থ হয়ে ওঠার সময়ে রোগীর শরীরে যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, তা নিখুঁত নয়। সোমবার গবেষক দল নেদারল্যান্ডের এক রোগীর ঘটনা সামনে এনেছেন। ৮৯ বছরের ওই রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। দ্বিতীয় বার কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। আগে থেকে ক্যানসারে ভোগার জন্য ওই রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা প্রথম থেকেই দুর্বল ছিল। সেই অবস্থায় দ্বিতীয় বার সংক্রমণের ধাক্কা সামলাতে পারেনি দুর্বল শরীর। অর্থাৎ একবার কোভিড ১৯ সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে দেহ যে হার্ড ইমিউনড হচ্ছে না, সেই প্রমাণ মিলেছে।একবার ভ্যাকসিন বেরিয়ে গেলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তেমনটাও মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও বার বার নিতে হতে পারে তা। আর এ এমন এক ভাইরাস, সভ্যতার সঙ্গে এ থেকেই যাবে, কোথাও মিলিয়ে যাবে না, বলতে দ্বিধা নেই তাঁদের!