উৎসবেই কি বিপর্যয়? করোনা সংক্রমণে ১৪ দিনেই আমেরিকাকে টপকে যেতে পারে ভারত

নিজস্ব সংবাদদাতা খবর ২৪: করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমেই ফারাক কমছে ভারতের৷ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, উৎসবের মরশুমে আর সপ্তাহ দু য়েকের মধ্যেই এক নম্বর জায়গা দখল করে নিতে ভারত৷ কারণ বিধিনিষেধকে শিকেয় তুলেই উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বহু মানুষ৷ করোনার বিপদকে ভুলে উৎসবে অংশ নেওয়ার ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, তার আদর্শ উদাহরণ কেরল৷ ভারতে করোনা সংক্রমণের প্রথম খোঁজ মিলেছিল দক্ষিণের এই রাজ্য থেকে৷ কিন্তু প্রাথমিক ভাবে করোনার রুখতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ এবং শৃঙ্খলা মেনে গোটা দেশের প্রশংসা কুড়িয়েছিল কেরল৷ কিন্তু অগস্ট মাসে কেরলে দশ দিন ব্যাপী ওনম উৎসবের পরই রাজ্যে সংক্রমণের হার প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷আগামী সপ্তাহ থেকেই দেশে উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে যাচ্ছে৷ দুর্গা পুজো, দশেরা, দিওয়ালির মতো উৎসব চলবে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলবে জমায়েত, ভিড় করা, কেনাকাটা, খাওয়া দাওয়া৷ এখনও পর্যন্ত এ সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সে অর্থে সরকারি স্তরে কোনও কড়াকড়ি চোখে পড়ছে না৷ শুধুমাত্র মৌখিক আবেদনে যে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ফিরবে না, তা বলাই বাহুল্য৷সতর্ক না হয়ে উৎসবে সামিল হলে যে বিপদ বাড়বে, বিশেষজ্ঞরা সে বিষয়ে বার বারই সতর্ক করছেন৷ প্রথম পাঁচ মাসে কেরলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷ সেখানে অগাস্ট মাসে ওনম উৎসবের পর কেরলে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ লক্ষে৷ কেরলের স্বাস্থ্যসচিব রাজন খোবরাগাড়ে স্বীকার করে নিয়েছেন, যত রকমের সুরক্ষাই নেওয়া হোক না কেন, উৎসবের মরশুমে ভিড়, জমায়েতে হলে সংক্রমণ বাড়তে বাধ্য৷কেরলের সরকারি আধিকারিকদের দাবি, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে ধরে নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন তাঁরা৷ তার উপরে কেরলের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় অনেকটাই উন্নত৷ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মতো বড় রাজ্যে সংক্রামিতের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গেলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে৷পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোভিড ১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে টাস্ক ফোর্সের গঠন করেছে, তার সদস্য চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীও দু্র্গা পুজোর ভিড় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গ নতুন ভাবনার ক্ষেত্রে বহু বিষয়ে পথ দেখিয়েছে৷ কিন্তু দুর্গা পুজোর আগেই মানুষ যেভাবে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন, তাতে পুজোর সময় খারাপ কিছুরই ইঙ্গিত মিলছে৷ শিক্ষিত অনেক মানুষই যেভাবে করোনার বিধিনিষেধগুলিকে অমান্য করছেন, তা ভয় বাড়াচ্ছে৷ আমরা খুূবই খারাপ সময়ের দিকে এগিয়ে চলেছি৷’গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন সতর্ক করে বলেন, ‘ভক্তি প্রমাণে কোনও ধর্মই বিশাল সংখ্যায় জমায়েতের কথা বলে না৷ তা করলে আমরা বড়সড় সমস্যায় পড়তে চলেছি৷’ ভারতে এখনও পর্যন্ত মোট ৭৩ লক্ষ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ মৃতের সংখ্যা ১,১২,০০০৷ যদিও গত কয়েক দিনে সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে৷যদিও এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় পুজোর পক্ষে সওয়াল করে সংবাদসংস্থাকে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘পুজোর সময় গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ শহরে এসে কিছু অর্থ উপার্জন করেন৷ সেই সুযোগ থেকে তাঁদের বঞ্চিত করলে হয়তো করোনার থেকেও অনাহারে বেশি মানুষের মৃত্যু হবে৷’ তিনি আরও বলেন, ‘ধানের বীজ বপন এবং কাটার মরশুম শেষ হয়ে গিয়েছে৷ ফলে রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ এখন উপার্জনহীন৷ একই ভাবে অসংখ্য ছোট ছোট ব্যবসায়ীও পুজোর সময় কিছু বাড়তি উপার্জনের দিকে তাকিয়ে থাকেন৷’

