Movie Review: ভালোবাসার সপ্তাহে প্রেমে ভিজল কই Sraboner Dhara?

নিজস্ব সংবাদদাতা খবর : ডা. শুভেন্দু সেনের গল্প ‘বিটুইন রেইন ড্রপ’ (Between Rain Drop) নিয়ে পরিচালক জুটির ছবি ‘শ্রাবণের ধারা’ (Sraboner Dhara)। দুই অসম বয়সীর প্রেম। আজকের কেরিয়ারিস্ট প্রজন্মের সম্পর্কের টানাপোড়েন। আর অতি আধুনিকতার অভিশাপ অ্যালজাইমার্স— এই নিয়ে ভীষণ চেনা গল্প। ইতিহাসের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অমিতাভ সরকার আর তাঁর বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা শুভা সরকার। অ্যালজাইমার্স ভুলিয়ে দিয়েছে অমিতের অতীত-বর্তমান। তিনি তা স্বীকারও করেছেন ডা. নীলাভ রায়ের কাছে, ‘আমার জীবনে দিন রাত বলে কিছুই নেই। সবটাই শুধু ধূসর।’অমিত-শুভা যদি আগের প্রজন্মের নিবেদিত প্রাণ প্রেমের উদাহরণ হন, নীলাভ আর তাঁর স্ত্রী এই যুগের ঘুণ ধরা সম্পর্কের প্রতিনিধি। উত্তর কলকাতার অভাব-আদর্শবান পরিবার থেকে উঠে আসা নীলাভ নিজের প্রতিভায় ব্র্যান্ডেড ডাক্তার। অভিজাত এলাকায় দামি বাড়ি-গাড়ি-বিলাস-বৈভব সব আছে। কিন্তু স্ত্রী-সন্তানের জন্য তাঁর সময় নেই! একসময় মা-বাবা-বন্ধু-বউ-মেয়ে—ব্রাত্য করে দেয় তাকে। একা হয়ে পড়ে নীলাভ যন্ত্রের মতো কাজের যাঁতাকলে পিষতে পিষতে। অন্যদিকে, একা শুভাও। সারাক্ষণ ভয় তার, অমিত যদি ভুলে যায় তাকে! ছবিতে যথারীতি অনবদ্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অভিনয় জীবনের শুরু থেকে বহু ছবিতেই অধ্যাপক তিনি। ৮৫-তে এসেও এভাবে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতা, নিজের পেশার প্রেমে মারাত্মকভাবে পড়লে তবেই সম্ভব। তাঁর যোগ্য সঙ্গতকার গার্গী রায়চৌধুরী। এমন অসম ছুটি ক্যানবন্দি করার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য পরিচালকদ্বয়ের।পরমব্রত ছবিতে ডাক্তারবাবু। চরিত্র অনুযায়ী তাঁর যতটা দেওয়া উচিত, তার এক ইঞ্চি কম দেননি। পজ এরিয়ায় এসে, ব্র্যান্ডেড হয়ে পুরনো বারো ঘর এক উঠোনকে ভোলার ক্রমাগত চেষ্টা, পুরনো বন্ধুকে এড়িয়ে যাওয়া, আবার তাকেই আপন করে নেওয়া, কাজের ভিড়ে হাফিয়ে উঠে একা ঘরে প্রাক্তন হতে চলা স্ত্রীকে ফের আঁকড়ে ধরার চেষ্টায় পরম অতি স্বাভাবিক।স্ত্রী হিসেবে বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায় যথাযথ। বরং সবার মধ্যেও নজর কেড়েছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। হাস্কি ভয়েসে, অটো ড্রাইভারের উচ্চারণে সংলাপ বলায় কী অদ্ভুত মুন্মিয়ানা দেখিয়েছেন। জয়তি চক্রবর্তীর গলায় ‘শ্রাবণের ধারার মতো’ রবীন্দ্র গান কানের আরাম। কিন্তু অনেক দৃশ্যেই ক্যামেরা কেঁপেছে। এটা কি এই পরিচালক জুটির থেকে আশা করা যায়! সবশেষে তাই বলতেই হয়, এই গল্প যেহেতু রোজের যাপিত জীবনের তাই নতুন কিচ্ছু পাবেন না দর্শক। পরিচালক সমস্যা দেখিয়েছেন, কিন্তু সমাধানের রাস্তা বাতলাননি। যদিও শুভা আদৌ অমিতের স্ত্রী না অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত অধ্যাপককে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভুয়ো সম্পর্কে মুঠোবন্দি করার চেষ্টা—এই প্রশ্ন দর্শককে বসিয়ে রাখবে। টেনে রাখবে সৌমিত্র-গার্গীর রসায়ন। কিন্তু ভালোবাসার সপ্তাহে প্রেমে ভিজল কই ‘শ্রাবণের ধারা’? নিটোল একটা প্রেমের গল্প বোধহয় বলা যেতেই পারত।

