হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে লেখা ‘করোনা পজিটিভ’, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত মুমূর্ষু ক্যান্সার রোগী

নিজস্ব সংবাদদাতা খবর ২৪: আবারও অভিযোগের তিরে বিদ্ধ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। এবারও মারাত্মক অভিযোগ। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে করোনা পজিটিভ লেখা থাকায় চূড়ান্ত হেনস্থার মুখে গোপনাঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত গরীব রোগী।মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আমজাদ মিঞাঁ। ৪৫ বছর বয়সী আমজাদ মিঞাঁর মাস তিনেক আগে গোপনাঙ্গ থেকে রক্ত পড়তে থাকে। প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন ৷ পরীক্ষা নিরিক্ষা করিয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে দিন দশ- বারো ঘোরাফেরা করার পর বহুকষ্টে অঙ্কলজি বিভাগে ভর্তি হন আমজাদ। তবুও চিকিৎসা শুরু হল না। নিয়ম অনুযায়ী করোনা পরীক্ষা করা হয় আমজাদের। আর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ায় এবার তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৫ দিন ভর্তি থাকার পর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ায় তাকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়। আমজাদ মিঞাঁকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার সুপারিশ করে হাসপাতাল। যে ক’দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন আমজাদ, তার ক্যান্সারের চিকিৎসা বিন্দুমাত্র হয়নি।১৪ দিনের হোম-কোয়ারেন্টাইন পর্ব কাটিয়ে অনেক আশা নিয়ে গত শুক্রবার আবারও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন আমজাদ। অঙ্কলজি বা ক্যান্সার আউটডোরে চার ঘণ্টা লাইন দিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তার পুরনো কাগজপত্র দেখতে চান চিকিৎসক। আর এরপরই আমজাদের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেখে রাগে ফেটে পড়েন ওই চিকিৎসক। কারণ সার্টিফিকেট এ লেখা করণা পজিটিভ। সেখান থেকে তাকে কোনওরকম চিকিৎসা না করে বার করে দেওয়া হয়। আর তারপর থেকে আউটডোর এর সামনে রাস্তায় ঠিকানা আমজাদ মিঞাঁর।মুর্শিদাবাদের গ্রামের বাড়িতে সামান্য একটা মুদি দোকান চালান আমজাদ। দিন আনি দিন খাই অবস্থা, অনেক টাকা খরচ করে ভাইপো আর জামাইকে নিয়ে কলকাতায় আসেন চিকিৎসার জন্য। সুচিকিৎসা তো দূর অস্ত উল্টে ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে করোনা পজিটিভ থাকায় গ্রামে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন আমজাদ। অন্যদিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে সেই রকম ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। আমজাদ সুপার অফিসে গেলে তাকে সুপারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় নি বলে অভিযোগ। সুপার অফিসে নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে আগামী বুধবার লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলে। তবে যে প্রশ্নটা উঠে আসছে,সুদূর গ্রাম থেকে আসা এক মুমূর্ষ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী কি আদৌ চিকিৎসা পাবে? কাঁদতে কাঁদতে আমজাদ আলীর ভাইপো রমজান আলী বলেছেন, ‘‘ আমার কাকা চিকিৎসা না পেয়ে মরে যাবে হয়তো, আমাদের তো আর পয়সা নেই, আমরা প্রাইভেট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে কি করে চিকিৎসা করাব! আমাদের এখানেই বসে থাকতে হবে। জানিনা, আমার কাকার আদৌ কোনও চিকিৎসা হবে কিনা।’’

