ছিয়াশী বছর পরে মনে পড়ে শরৎচন্দ্রের বামুনের মেয়ে উপন্যাস

সত্যজিৎ চক্রবর্তী : দুলে – বৌ ইতস্ততঃ করিয়া কহিল , ওষুধ চাই না বাবা ঠাকুর,
দুটো চাল পেলে মেয়েটাকে ফুটিয়ে দিই। 1934 সালে সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার বামুনের মেয়ে উপন্যাসে
একথা গুলি বলেছিলেন। কলকাতার চব্বিশ নম্বর অশ্বিনী দত্ত রোডের বাড়িত এই উপন্যাস রচিত হয়েছিল।
ছিয়াশি বছর পর নদীয়ার দুলে পাড়াতে গিয়ে একই কথা শোনা গেল রাসু দুলের কাছে। বললেন চাল চাই। চাল। দুটো চাল পেলেই
নুন দিয়ে মেখে ফ্যানে ভাত খাওয়া যাবে। মিনা দুলে ছুটতে ছুটতে এসে বলল বাবু আমার নামটা বাদ যায় নি তো। দুলে পাড়া টা যেন নিস্তব্ধ নিস্তেজ হয়ে
গেছে। প্রথমে তিনবেলার বদলে
দুবেলা। এখন একবেলা খাওয়া
জুটছে। মে মাস কি হবে। কে দেবে খাওয়ার জোগান। জানেন না মাধব দুর্লভ রা। দুলেপাড়ায় ত্রাণ পৌঁছেছিল একদিন। ওই টুকু। রেশনের পাঁচ কেজি চাল গমে তো পুরো মাসচলবে না।
ভয়ঙ্কর এক আতঙ্ক কাজ করছে
দুলে পাড়ায়। লকডাউনে কাজ
হারিয়ে সব ঘরবন্দী। অন্য বাড়িতে কাজ করতে গেলেও
নেওয়া হচ্ছে না কাজে। অসহায় মানুষের জন্য এখনি প্রয়োজন চাল আটা। সেটাই তাদের প্রধান দাবি। এখানকার মানুষরা সবজি বিক্রি করতেন । কেউবা মাঠে কাজ করতেন। সব বন্ধ। জমানো টাকা সব শেষ। ধারও মিলছে না মুদি দোকানে। সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে চুয়াল্লিশ শতাংশ মানুষ একবেলা খাচ্ছেন। তাঁতিগাছি এলাকার দুলেপাড়ার মানুষ সেই চুয়াল্লিশ শতাংশ মানুষের দলে। কিন্তু তারা কি অর্ধাহারে থাকবেন। কতদিন।
জানা নেই মিনা দুলের পরিবারের। তারা এখন খোঁজ করছেন প্রিয় মুখুর্য্যের। বামুনের মেয়ে উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র।আসলে সমাজের এই শ্রেণীর মানুষেরা এখন ও অনেকটা পিছিয়ে আছেন। সামাজিক রাজনৈতিক ও আর্থিক দিক থেকে। তাদেরকে রাখাও হয়েছে।
হয়তো রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতেও পারে। আসুন সবাই এগিয়ে আসি। তাদের পাশে দাঁড়াই। তাদের জন্যও দুমুঠো অন্ন তুলে দিই।

